ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের গেট নম্বর ১-এর কাছে ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়ানো একটি হুন্ডাই আই-২০ গাড়িতে এ বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই গাড়িটিতে আগুন ধরে যায় এবং আশপাশের একাধিক যানবাহন ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তে জানা গেছে, বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়েছিল।

গাড়িটি প্রথমে গুরগাঁওয়ে (বর্তমানে গুরগাঁও, হরিয়ানা) নিবন্ধিত ছিল, যার নম্বর ছিল HR26। এটি একাধিক মালিকের হাতে ঘুরে শেষ পর্যন্ত ডা. উমর নবি নামের এক ব্যক্তির কাছে যায়, যিনি সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তিনি কাশ্মীরের বাসিন্দা এবং জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর সঙ্গে যুক্ত বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।

লালকেল্লা বিস্ফোরণের দিনই জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সহযোগিতায় হরিয়ানার ফরিদাবাদ শহরে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার করে। উদ্ধার করা হয় প্রায় ২,৯০০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, কয়েকটি একেএ-৪৭ রাইফেল ও বেরেটা পিস্তলসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম।

এই অভিযানের সূত্র পাওয়া যায় উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে গ্রেফতার হওয়া ডা. আদিল আহমেদ রাঠের-এর জিজ্ঞাসাবাদে। আদিলও কাশ্মীরের বাসিন্দা এবং সাহারানপুরে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়— ডা. মুজাম্মিল (ফরিদাবাদ) এবং ডা. শাহিন শাহিদ (লখনউ)। জানা গেছে, ডা. শাহিন সম্প্রতি জইশ-ই-মোহাম্মদের নারী শাখার ভারতীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) মামলা করেছে দিল্লি পুলিশ। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) ও দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল। বিস্ফোরণের ধরণ ও ফরেনসিক প্রমাণ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি একটি সংগঠিত জঙ্গি হামলা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সন্ত্রাসবাদের বাহ্যিক উপস্থিতি কিছুটা কমলেও এর আদর্শিক কাঠামো এখনো সক্রিয়। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা (২৬/১১) থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা এবং ২০২৫ সালের পেহেলগাম হামলা— প্রতিটি ঘটনায় ভারত একইভাবে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

লালকেল্লা বিস্ফোরণ সেই চলমান সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রামে নতুন এক ভয়াবহ অধ্যায় যুক্ত করেছে বলে মনে করছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।